বুধবার- ৪ঠা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

dainiknilgiri.com
প্রচ্ছদ /

বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্পদের পাহাড়, রয়েছে ৮শ একর জমি

বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। বিগত ১৬ বছরের চেয়ারম্যানীতে এমন কোন অনিয়ম নাই সে করেনি। নিয়োগ, বদলী, টেন্ডার, জমি ও প্লট বাণিজ্য থেকে শুরু করে বান্দরবান জেলা পরিষদের ২৮ টি ন্যস্ত বিভাগের প্রত্যকটি প্রকল্পের কাজে তাকে আগে পার্সেন্টিজ দিতে হতো। না হয় প্রকল্পের বিল আটকিয়ে রাখতো দিনের পর দিন।

এভাবে করে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। পুরো বান্দরবান জুড়ে প্রায় ৮শ একর জমিরও সন্ধান পাওয়া গেছে তার নামে বেনামে এবং স্ত্রীর নামে। এর আগে গতমাসে (১২ আগস্ট) দৈনিক যুগান্তরে ‘অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে ৭২০ কোটি টাকা লুট’ শিরোনামে বান্দরবান জেলা পরিষদের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে একে একে বেরিয়ে আসে চেয়ারম্যানের যতসব অপকর্ম ও সম্পদের বিবরণী।

 

জানা যায়, ক্য শৈ হ্লার দুর্নীতির ছোঁয়ায় জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীও শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে তার আমলে।

 

যেখানে এক সময় দুবেলা দুমুটো ভাত জুটতো না সেই ক্য শৈ হ্লার সম্পদের পাহাড় যেনো আলাদীনের চেরাগকে হার মানাবে।

 

ক্য শৈ হ্লার সম্পদের বিবরণী:

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবান পৌরসভার উজানীপাড়াতে জমিসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকা দামের ৫ তলা ব্যয়বহুল ভবন, সদর উপজেলার রামজাদী নামক স্থানে জমিসহ প্রায় ২০ কোটি টাকা দামের বাড়ি নির্মান করেছে চীন থেকে রাজ মেস্ত্রী এনে। বান্দরবান সদরের মেঘলা পর্যটন এলাকায়ও দুই কাগজে রয়েছে ২০ একর জমি। সদরের যৌথ খামার এলাকায় রয়েছে ১০ একর জমি। রুমা উপজেলার পুরাপাড়া চিম্বুক এলাকায় রয়েছে ১৫ একর জমি।

 

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে রয়েছে ৩শ একর জমি এবং আজিজনগর ইউনিয়নে চাম্বি মৌজাতেও রয়েছে ১৫০ একর জমি।

 

নাইক্ষংছড়ি উপজেলায় ভাল্লুক খাইয়া মৌজায় নামে বেনামে রয়েছে প্রায় ১শ একর জমি । জানা যায়, দলিল জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় করে নাম জারি করার চেস্টা করছে জমিগুলো। আরো জানা যায়, বন বিভাগ বাধা দেয়ার পরেও ঐ মৌজার দুর্নীতিবাজ হেডম্যান মংশৈপ্রুর সহযোগিতায় এসব জমি দখলে নিয়েছে ক্য শৈ হ্লা। এ ব্যাপারে মংশৈয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

অন্য দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাইক্ষংছড়ি উপজেলার জারুলিয়া ছড়ি মৌজায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর সহযোগিতায় উপজাতিদের প্রায় ২শ একর জমি জবর দখল করেছে ক্য শৈ হ্লা। সেখানে জেলা পরিষদের প্রকল্প থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে বাধঁ ও দুই কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাও নির্মাণ করেছে। তবে এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করলেও উনি কল রিসিভ করেননি। এলাকাবাসীরা জানায়, জনমানবশূন্য এলাকায় কেন সরকারী এতো টাকা খরচ করেছে সেটা আমাদের জানা নাই।

 

রেজু মৌজায় সাড়ে ৪ একর জমিতে বিভিন্ন জন থেকে দলিল ক্রয় করে সাধারণ মানুষের ২৫ একর জমি দখল করে নেয় ক্য শৈ হ্লা। সুত্রে জানা যায়, এই জমিতে বান্দরবান জেলা পরিষদের সরকারী প্রকল্প থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা বাজেট করে উন্নয়ন এবং বাগান করে ক্য শৈ হ্লা।

 

আলীকদমের  নয়াপাড়া ইউনিয়নের পর্যটন এলাকা আলীর সুরঙ্গের পাশে প্রায় ১৫ একর জমি রয়েছে ক্য শৈ হ্লার।

 

রোয়াংছড়ি উপজেলার লাফাইমুখ তার নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য ২০ কোটি টাকা খরচ করে ব্রিজ এবং রাস্তা নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদের প্রকল্প থেকে  যেখানে অন্য কোন বসতি নাই বললেই চলে। জানা যায়, তার নিজের ব্যক্তিগত প্রার্থনার জন্য  যে ক্যায়াং ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তাও জেলা পরিষদের টাকায়।

 

অন্যদিকে সদর উপজেলার যৌথ খামার এলাকায় স্ত্রী নামেও তিনটি দলিলে জমি রয়েছে প্রায় ১৫ একর।

 

তাছাড়াও মিয়ানমারে গাড়ির শোরুম এবং মালেশিয়ায় জুতার ফ্যাক্টরিসহ আরো অনেক ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়। মালেশিয়ায় ব্যবসাগুলো দেখাশুনা করেন ক্য শৈহ্লার ২য় বউ রিংকী চৌধুরী এবং নাইক্ষংছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ।

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বান্দরবানের এক নেতা জানায়, এ সব সম্পদ সর্বনিম্ন বাজার দরও যদি ধরা হয় তাও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

 

জমি ও প্লট বাণিজ্য: জমি ও প্লটের লীজ বাণিজ্য ছিল ক্য শৈ হ্লার অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস। সম্প্রতি বান্দরবান বহুমুখী সমবায় সমিতির দুটি প্লট অবৈধভাবে খাস দেখিয়ে রাতারাতি অন্যজনকে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে লীজ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়াও বান্দরবান বিশ্ব বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গা ও লুম্বিনী লিমিটেডের জায়গা লীজ দেওয়ার সময়ও মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ক্য শৈ হ্লার বিরুদ্ধে।

 

কেএনএফের মদদ দাতা:

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবর রহমান এক বক্তব্য বলেন, বান্দরবানের চলমান পরিস্থিতির জন্য একমাত্র দায়ী ক্য শৈ হ্লা। কারন কেএনএফের প্রকৃত মদদ দাতা হচ্ছে সে। তার জন্য আজ বান্দরবান পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পথে।

 

রাজাকারের ছেলে ক্য শৈ হ্লা: প্রকৃতপক্ষে ক্য শৈ হ্ল হচ্ছে রাজাকারের ছেলে। তৎকালী বান্দরবানের রাজাকারদের লিস্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে তার বাবার নামও উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়াও প্রতিদিন সকাল ১০ টায় মুজিব বাহিনীর কাছে হাজির হওয়া সাপেক্ষে তার বাবাকে মুক্তি দেওয়া গেল মর্মে একটি পত্রও পাওয়া যায়।

 

ক্য শৈ হ্লার নারী কেলেঙ্কারীও ছিল অনেক। নাম প্রকাশ না করা শর্তে জেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানায়, ১ম স্ত্রী থাকা সত্তেও কেলেঙ্কারী থেকে বাঁচতে বান্দরবানের এক মুসলিম ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে বিয়ে করে ক্য শৈ হ্লা। তাছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, স্বাস্থ্যকর্মী ও এনজিও কর্মীদের সাথে বিভিন্ন সময় অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক।

 

বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ: বান্দরবান ডনবস্কো উচ্চ বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি ছিল ক্য শৈ হ্লা। সভাপতি থাকা কালীন নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক থাকা সত্তেও বেসরকারীভাবে আরো একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেন ক্য শৈ হ্লা এবং তার মাধ্যমে ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট থেকে প্রায় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে জানায় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা।

 

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের মূখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানায়, আমি যোগদান করেছি মাস ছয়েক হয় মাত্র। তাই আমার এতো কিছু জানা নাই।

 

এ ব্যাপারে ক্য শৈ হ্লার বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করার চেস্টা করেও কোনভাবে সম্ভব হয়নি। মোবাইল নাম্বার, হোয়াটসএ্যাপে ফোন করে এবং ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোন প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি। তাছাড়াও ৫ তারিখে সরকার পতনের পর থেকে ক্য শৈ হ্লাসহ বান্দরবানের শতাধিক নেতাকর্মীরা পলাতক রয়েছে।

 

2Shares

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়