বৃহস্পতিবার- ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

dainiknilgiri.com

থমকে গেছে পাহাড়ের পর্যটন শিল্প, দৈনিক ক্ষতি কোটি টাকা

দীর্ঘ দিন ধরে পর্যটক না আসায় থমকে গেছে পাহাড়ের পর্যটন শিল্প। বিভিন্ন ছাড় দিয়েও পর্যটকের দেখা মিলছে না পাহাড় কন্যা বান্দরবানে। পাহাড়ের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিবর্ণ এখন বান্দরবানের পর্যটন শিল্প। এর প্রভাব পড়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন খাতে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি পাহাড় কন্যা বান্দরবান। পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ছুটি আসেন শত শত পর্যটক। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ভুলে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পর্যটকরা চাঁদের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ান এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। জেলার মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, তমাতুঙ্গীসহ সবগুলো দর্শনীয় স্থান গুলোতে ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারনায় মুখর হয়ে থাকে।

কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড়ের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী বান্দরবান। বিভিন্ন ছাড়েও দেখা মিলছে না পর্যটকের। এর প্রভাব পড়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন খাতে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। দুশ্চিন্তায় পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবান শহরের আরণ্য হোটেলের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে করোনা, এরপর বন্যা, জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী সাড়াশি অভিযান, সর্বশেষ সরকার পতনের পর থেকে আমাদের পর্যটন ব্যবসা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। আমাদের আর বলার ভাষা নেই। আমরা কিভাবে ব্যাংক লোন পরিশোধ করবো সেটাও জানিনা।

ইতোমধ্যে অনেক কর্মচারীকে বেতন দিতে না পেরে বিদায় করে দিয়েছি। খুব শীঘ্রই আমাদের এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে হবে। হোটেল গ্রীনপিক এর ম্যানেজার বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারতেছেনা, আমরা জানিনা এভাবে আর কতদিন চাকরি করবো। যদি চাকরি চলে যায় তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করতে হবে। আমরা চাই দ্রæত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আগের মত বান্দরবানে পর্যটকরা ঘুরতে আসুক।

চাঁদের গাড়ী চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানে তেমন কোন পর্যটক আসতেছে না। পাহাড়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা কমতেছে। আমরা চালকরা সম্পূর্ণভাবে পর্যটকের উপর নির্ভর। পর্যটক না আসায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করতেছি। আমরা চাই আবারো আগের মত পর্যটকরা বান্দরবানে ঘুরতে আসুক, পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা যেন সুখে থাকতে পারি।

বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজ বলেন, পর্যটক না আসায় বর্তমানে বান্দরবানে গড়ে কোটি টাকার মত ক্ষতি হচ্ছে। আর কর্মহীন হয়ে বেকার অবস্থায় আছে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত অসংখ্য শ্রমিক। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ এর অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বান্দরবানে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে আগত পর্যটকরা নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াতে পারবে। উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ হাজারের বেশী মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত।

21Shares

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়