৫৬ মে. টন ভালো চালকে নষ্ট দেখিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বান্দরবানের লামা উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি তিমির কুমার দে বিরুদ্ধে। তার সাথে জড়িত রয়েছে নব নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কান্তি দাশ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জ্যোতি বিকাশ ত্রিপুরা ও জেলা খাদ্য অফিসের কর্মচারী নিকোশিয়া চাকমা। যদিও বা তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে কম দামে নিলাম দেওয়া সরকারি চাল শুক্রবার সকালে গুদাম থেকে বের করার খবর পেয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গাড়ি লোড-আনলোড বন্ধ রাখা হয়েছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত অর্ধেক লোড করা দুটো ট্রাক লামা খাদ্য গুদামে দেখতে পাওয়া যায়।
সুত্রে জানা যায়, বিগত বর্ষা মৌসুমে বান্দরবানের লামা খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি তিমির কুমার এর গাফেলতির কারণে গুদামে বন্যার পানিতে চাল নষ্ট হয়েছিল প্রায় ৪০ মে.টন, কিন্তু নষ্ট দেখানো হয়েছে ৯৬ মে.টন। অর্থাৎ আরো ৫৬ টন ভালো চালকে নষ্ট দেখানো হয়েছে। এর কারন হচ্ছে ভাল চালগুলো সরকারকে কম মূল্য দেখিয়ে গোপনে বিক্রি করবে বাজার দামে।
সেই সুবাদে এই চালগুলো প্রতিটন মাত্র ৭ হাজার টাকা ( প্রতিকেজি ৭ টাকা ৫ পয়সা) নামমাত্র মূল্যে দাম দেখিয়ে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে গোপনে মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ টাকা করে।
তাছাড়াও এই চালের নিলাম প্রক্রিয়ায়ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক ভুক্তভোগি ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, নিলাম ডাকা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদেরকে কৌশলে নিলামে অংশ গ্রহন করতে দেয়নি ওসি এলএসডি। এমনিক ভেজা চাল গুলোর স্যাম্পল দেখতে চাইলে ওসি এলএসডি তিমির কুমার দে জেলা খাদ্য অফিসারের নিষেধ আছে জানিয়ে স্যাম্পল দেখতে দেয়নি। উল্টো লামা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কান্তি দাশকে দিয়ে শাসিয়ে দেন। প্রদীপ কুমার দাশ ওসি এলএসডি তিমির কুমারের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত।
অনুসন্ধানে জানা যায় মূলত, ওসি এলএসডি তিমির কুমার দে, জেলা খাদ্য অফিসের কর্মচারি নিকোশিয়া চাকমা মিলে মোহাম্মদ আলী নামের ডিলারের নামে চালগুলো নিলামে নিয়ে তারা নিজেরাই বিক্রি করছে খোলা বাজারে। নিলাম প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে মোহাম্মদ আলী ভারতে অবস্থান করেছিলেন।
জানা যায়, বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ার পর গোদাম পরিদর্শন করে তৎকালিন সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম রাহাতুল ইসলাম। মুলত উনাকে ভুল বুঝিয়ে ৪০ মে.টনের জায়গায় ৯৬ মে.টন দেখিয়ে উনার স্বাক্ষরও নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম রাহাতুল ইসলামকে অসংখ্যবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে লামা খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি তিমির কুমার দের সাথে যোগাযোগ করা হলে ওনি প্রতিবেদককে উল্টো আরও পুলিশের ভয় দেখান এবং আত্মসাৎ এর অভিযোগ অস্বীকার করেন। ভুক্তভোগি ডিলারদের চালের স্যাম্পল কেনো দেখানো হয়নি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যখন দেখতে চেয়েছিল তখন নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, চালগুলো বের করতে অবশ্যই আমার একজন প্রতিনিধি রাখা দরকার ছিল কিন্তু তিনি(ওসি এলএসডি) রাখেননি এমনি চাল নিয়ে যাওয়ার কথা আমাকে জানাইওনি। আমি ছুটিতে থাকায় আপাতত চাল লোড আনলোড না করার জন্য বলে দিয়েছি। আমার প্রতিনিধির মাধ্যেমে দরকার হলে এক বস্তা এক বস্তা চেক করে করে বের করবো।