দীর্ঘ ৪৭ বছরের পুরোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। শিক্ষার্থীশূণ্য হয়ে পড়ছে দিন দিন। স্থানীয়দের মতে এক সময় এই বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ৪শ শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীশূণ্য হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয়দের দাবি, পুরোটাই শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের গাফেলতি। কারন শিক্ষকরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেনা আর শিক্ষা অফিসও তাদেরকে তদারকি বলে না।
বলছি বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পূর্বচাম্বি মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে পুরো বিদ্যালয় মিলে ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী আছে। দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে এভাবে চলছে বিদ্যালয়টি। ঠিক মতো শিক্ষক না আসা, ঠিক মতো ক্লাস না হওয়া বিদ্যালয়টার জন্য নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়াও বিদ্যালয়ে অনেকগুলো শ্রেণি কক্ষ থাকার পরও যে কয়জন বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থী রয়েছে তাদেরকে একসাথে একই কক্ষে এক শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কারন এই বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক একই দিনে একই সাথে আসেন না। তারা রুটিন করে একেকদিন একেকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন।
সরেজমিনে সকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে দুইজন শিক্ষক এসেছে। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন নামের একজন শিক্ষক বিভিন্ন ক্লাসের মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী একসাথে নিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের বাহিরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এদিকওদিকে হাঁটাহাটি করছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা চেক করে দেখা যায়, শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় মোট ১০২ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে।
প্রত্যেকটা ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিদিন ১শ পার্সেন্ট উপস্থিতিও দেখানো হয়েছে। তবে সরে জমিনে পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া যায় মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের বাহিরে কয়েকজন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাথে দেখা হল। তাদের কাছ থেকে বাংলা বর্ণমালা এবং ইংরেজি এলফাবেটগুলো জানতে চাওয়া হলে সঠিকভাবে বলতে পারেনি।
আর এদিকে আরেকজন শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা সকাল ১১টা বাজেও বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়নি। প্রধান শিক্ষক জানায়, তিনি কোন ছুটিও নেন নি। কিছু বললে একসময় আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখাতো এখন জামাতের ক্ষমতা দেখায় সে।
অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা মুঠোফোনে বলেন, আমি বান্দরবান থেকে আসতেছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় দেরি হয়ে গেছে। অথচ বিগত ১ সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে দেখেনি বলে জানাই স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম জসিমুল আলমের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি কেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
স্থানীয় অভিভাবক ফারুক জানায়, ১০ টা বা ১১ টার দিকে গেলে কোন শিক্ষককে পাওয়া যায় না। ১০ বা ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীও নাই বর্তমানে। শিক্ষকদের কল দিলে তারে কেউ বলে বাড়িতে আবার কেউ বলে অফিসিয়াল কাজে উপজেলায়। বলতে গেলে এখানে কোন লেখাপড়াই হচ্ছে না।
ইউসুফ নামের বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী জানায়, এক সময় এই বিদ্যালয়ে ৩ শ থেকে ৪শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষকদের অবহেলার কারনে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
স্থানীয় আরেক অভিভাবক বলেন, স্কুলটা শুধু সরকারি নামে আছে কোন কাজে নাই।
লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টা আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।