চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি রেঞ্জের হারবাং বনবিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে দিনের আলো পেরিয়ে রাতের অন্ধকার নামলেই প্রতিনিয়ত অবাধে পাচার হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারী কাঠ।
এছাড়াও বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজপূর্বক বনভূমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে স্থায়ী বসতবাড়ি। সেই সাথে কাটা হচ্ছে পাহাড় এবং লুট হচ্ছে বনভূমির জায়গা থেকে বালু। কাঠ পাচারে প্রতিদিন ৩০/৪০ হাজার টাকার অবৈধ লেনদেন করেন বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদ।
অভিযোগ উঠেছে বনখেকো, পাহাড়খেকো ও বালুখেকোদের কাছ থেকে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি. সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বনবিভাগ এবং স্থানীয় দালাল ও কাঠ চোর সিন্ডিকেটের ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বনবিট কর্মকর্তার সামনে দিয়ে। বনবিট কর্মকর্তার এমন আচরণে যে কারো মনে হতে পারে তার চোখ থাকতেও তিনি অন্ধ। ফলে অবাধে বৃক্ষ নিধনে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও দেখা দিয়েছে শংকা।
এদিকে, হারবাং বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে প্রতিদিনই ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, ট্রাক এমনকি যাত্রীবাহী বাসে করে হাজার হাজার টাকার মূল্যবান সেগুন কাঠ কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া নিয়ে যেতে দেখা যায়। মাঝে মধ্যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠবাহী গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখে। পরে বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদামাফিক টাকা দিয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হয়।
এভাবে প্রতিদিন ১৫/২০ হাজার টাকা আদায় করেন বিট কর্মকর্তা আবু সাঈদসহ তার কর্মচারীরা। তবে, বিটকর্মকর্তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে ডান হাত হিসেবে কাজ করেন হারবাং বনবিট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিরত বনরক্ষী মহসিন হাওলাদার। বিট কর্মকর্তা হারবাংয়ে নবাগত হলেও সকল উপরি কামাইয়ের পথ প্রদর্শক এ মহসিন হাওলাদার। দীর্ঘদিন এক বনবিটে চাকরিরত থাকায় সে ভালো করেই জানেন, কোথায় হাত দিলে উপরি কামাই ভালো হবে!
এমনকি, সেগুন গাছভর্তি ট্রাক দিনে নিয়ে গেলে চাঁদার অংক একটু কম হলেও সন্ধ্যার পর যেসব অবৈধ সেগুন কাঠভর্তি ট্রাক আসে সেগুলোর চাঁদার অংক দ্বিগুণ। আর এসব গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য খোদ বনবিট কর্মকর্তা অঘোষিতভাবে ক্যাশিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন নুরুল ইসলাম নামের এক গাছ ব্যবসায়ীকে। সারাদিন আজিজনগর থেকে ঈদগাঁ ও পেকুয়া যেতে ও চকরিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হারবাং বনবিটের উপর যেটুকু সড়ক পথ আছে সেটুকু পথ চাঁদা আদায় করে অতিক্রম দেন নুরুল ইসলাম নামের এ স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ী। ট্রাক ভেদে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় বলে জানা গেছে।
এতে করে কাঠ পাচারকারীরা অবাধে কাঠ পাচার করতে পারায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের হারবাংয়ের বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের হারবাং বনবিটের আওতাধীন এলাকায় সরকারী অর্থে ও প্রাকৃতিকভাবে সৃজনকৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচারকারীরা দিনে ও রাতে সেগুন, চাপালিশ, গামারী, কড়ই, গর্জন, আকাশমনি, জামগাছসহ নানা প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কেটে সরকারী বাগান সংলগ্ন নিরাপদ জায়গায় স্তুপ করে রাখে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব কাঠ গাড়ীভর্তি করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে রাতভর পাচার করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন ইটভাটা ও স’মিলে।
বর্তমানে বনবিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। এতেই শেষ নয়, বনবিভাগের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোনভাবেই খবর পেয়ে বিশেষ অভিযানে নামে তখন অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা গাছপাচারকারীদের কাছে সে খবর দ্রুত পৌঁছে দেয়। এতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিযান নিষ্ফল হয়। অন্যদিকে রাত ১০টা পেরুলেই শুরু হয় ট্রাকভর্তি কাঠ পাচারের প্রতিযোগীতা।
কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশন বা টিপি থাকার পরও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কপথের হারবাং বনবিট এলাকা দিয়ে গাছ নিয়ে আসতে হলে হারবাং বনবিট কর্মকর্তার অঘোষিতভাবে নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ার নুরুল ইসলামকে নির্ধারিত হারে গাড়ি প্রতি চাঁদা দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, বনবিভাগ ও তাদের দালালদের চাঁদা দেবার বিষয়টি অনেক পুরোনো ব্যাপার। যারা বৈধভাবে গাছ নিয়ে আসছে তাদেরকে তারপরও কিছু দিতে হয়। আবার যারা অবৈধভাবে নিয়ে আসছেন তাদের কাছ থেকে গাড়িভেদে ৪ হাজার থেকে শুরু করে যত পারে তত টাকা নিয়ে থাকেন বনবিটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের অঘোষিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার।
কোনো কোনো সময় পরিমাণমতো চাঁদা না পেলে গাড়িগুলো আটক করে রাখা হয়। ট্রাক চালক আব্দুল গণি জানায়, কাঠবাহী গাড়ী হারবাং বনবিট এলাকা অতিক্রিম করার সময় উক্ত স্টেশনে কাঠের ক্যাটাগরি অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪হাজার থেকে ৬হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। না দিলে হারবাং বনবিটের নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ার নুরুল ইসলাম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হামলার শিকার হতে হয়। এদিকে, হারবাং ইউনিয়নের তেইল্লাকাটা এলাকায় সামাজিক বনায়নের বাগান কাটছিলেন মোর্শেদ আলম ও মান্নানসহ কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট।
এ জায়গায় গত ৮ জানুয়ারি (বুধবার) বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদ, এফজি মহসিন হাওলাদার, দেলোয়ার ও শান্ত সহ ৪ জন যায়। যাওয়ার পর মাত্র সাড়ে ৮হাজার টাকা উৎকোচ হিসেবে নিয়ে সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের বৈধতা দিয়ে আসেন তার। একইভাবে গত ৩ জানুয়ারী গয়ালমারা দিয়ে পূর্ব পাশে ঢুকে কাট্টলী এলাকায় রফিক ও বিএনপি নেতা মিরানের নেতৃত্বে আরেকটি সামাজিক বনায়ন কর্তন করা হয়।
সেখানে গিয়ে প্রথমে ১০ হাজার টাকা ও পরে এফজি মহসিন হাওলাদার নিয়েছেন ১ হাজার টাকা। সর্বমোট ১১হাজার টাকা উৎকোচ হিসেবে নিয়ে সেখানেও বনখেকোদের সামাজিক ধ্বংসের সুযোগ করে দেন তারা। এছাড়াও, হারবাং বনবিটের অধীনে ইতোমধ্যে ৮টি বাড়ির কাজ চলমান থাকলেও চারটির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে এবং