কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ডাঃ মামদুহা রহমান’কে বেসরকারি এনজিও সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। এজন্য এনজিও সংস্থা থেকে মাসিক বেতন নেন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা। বিশ্রাম ব্যতিত ২৪ ঘন্টা হাসপাতালের গাইনি সেবায় দায়িত্ব পালনের নিয়ম থাকলেও তিনি অধিকাংশ সময় দেন প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কৌশলে প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ডাঃ মামদুহা রহমান ও তার স্বামী ডাঃ আব্দুল মন্নানের বিরুদ্ধে।
প্রাপ্ত তথ্য ও অভিযোগ সূত্রে জানা’গেছে, কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস্) হিসেবে বেসরকারি এনজিও সংস্থা সিআইপিআরবি থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ পান ডাঃ মামদুহা রহমান। তিনি সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ পেলেও প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার সারাদিন চেম্বার করেন চকরিয়া ম্যাক্স হাসপাতালে। অপরদিকে একই ডাক্তার একই সময়ে চেম্বার করেন চকরিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে। যেটি দুই হাসপাতালের প্রচারিত প্রসফেক্টার্স (প্রচারপত্র)-এ উল্লেখ রয়েছে। একই ব্যক্তি, একই সময়ে এক সাথে দুইটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং এনজিও কৌটায় সরকারি হাসপাতালে কিভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন? এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনে করানো বিষয়ে।
কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ দেয়া এনজিও সংস্থা এসব কি দেখেনা? যেখানে ৩/৪জন বিসিএস ধারী চিকিৎসকের বেতনের সমপরিমাণ বেতন একজন বেসরকারি ডাক্তারকে দিচ্ছেন এনজিও সংস্থা, সেখানে কোন তদারকি নেই কেন? এমন প্রশ্ন চিকিৎসা সচেতন মহলের।
এদিকে, একই অভিযোগ উঠেছে ডাঃ আব্দুল মন্নানের বিরুদ্ধে। উল্লেখিত ডাঃ মামদুহা রহমান আব্দুল মন্নানের স্ত্রী। একই এনজিও সংস্থার অধীনে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জারী বিভাগে নিয়োগ পান ডাঃ আবদুল মন্নান। তিনি মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োমিত চেম্বার করেননা। চাকুরী টিকিয়ে রাখার জন্য সাপ্তাহে দুএকদিন অল্প সময়ের জন্য মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চেম্বার করেন তিনি। বিশেষ অনুরোধে প্যারা ডাক্তার হিসেবে সাপ্তাহে সোমবার স্বল্প সময়ের জন্য চেম্বার করেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু শুক্রবারসহ প্রতিদিন সকাল-বিকাল রোগি দেখেন চকরিয়া মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে। আবার একই সময়ে প্রচারপত্র অনুযায়ী রোগী দেখার সময়সূচি রয়েছে চকরিয়া ম্যাক্স হসপিটাল এবং চকরিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে। তিনি গাইনি কনসালটেন্ট না হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতি মহিলা রোগিদের নিয়োমিত সিজারিয়ান অপারেশন করেন। যা পুরোপুরি নিয়ম বহির্ভুত বলে জানান একাধিক মেডিকেল অফিসার। একজন ডাক্তার সরকারি হাসপাতাল সহ বেসরকারি এত গুলো হাসপাতালে কিভাবে একসাথে চেম্বার করেন। অথচঃ তাকেও এনজিও সংস্থা সিআইপিআরবি থেকে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতন দেওয়া হয়। যা ৫জন বিসিএস ডিগ্রিধারী সরকারি ডাক্তারও এ সমপরিমাণ বেতন পান না বলে শোনা যায়! এই অনুপাতে তার নিয়োমিত সময় দেওয়ার কথা মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিষয়টি সচেতন মহল, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই দুইজন চিকিৎসক এনজিও সংস্থার অধীনস্থ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন কর্মযজ্ঞ চালাতে পারে। সচেতন মহল বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও এনজিও সংস্থা সিআইপিআরবিসহ
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষেয়ে জানতে চাইলে ডাঃ মামদুহা রহমান ও ডাঃ আবদুল মান্নান জানান, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখেন। অন্য সময়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চেম্বার করলেও অনকলে গিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুগী দেখে আসার কথা জানান ডাঃ মামদোহা। ডাঃ মান্নান জানান, যেখানে গাইনী ডাক্তারেরা ফেল মারে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য আমাকে রাখা হয়েছে। তিনি নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন করেন বলে জানান।
সিআইপিআরবি এর কক্সবাজারের কো-অর্ডিনেটর ডাঃ মোঃ হাসান জানান, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতার কারনে রোগীরা যেন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনজিও কর্তৃক কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক তাদের দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে। কেউ যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করে প্রাইভেট চেম্বারে বেশি সময় ধরে রোগী দেখে থাকে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ##