বৃহস্পতিবার- ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

dainiknilgiri.com

বান্দরবানে যৌথ অভিযানে ৫৬ জন গ্রেফতার, দেশীয় বন্দুক উদ্ধার

বান্দরবানে যৌথ অভিযানে ৫৬ জন গ্রেফতার, দেশীয় বন্দুক উদ্ধার

বান্দরবানের রুমা বেথেল পাড়া থেকে ১৮ জন নারীসহ আরও ৪৯ জন কেএনএফ সদস্য আটক করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর আটকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৬ জন।

সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, রুমা থেকে নতুন করে আটক ৪৯ জনকে রাতে সাড়ে ৭টায় গাড়িতে করে বান্দরবান সদর থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষ আদালতে পাঠানো হবে।

এদিকে বান্দরবানে সেনাবাহিনী-র্যাব-পুলিশের পৃথক অভিযানে কেএনএফের ছয় সদস্য ও সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ারকে আটক করা হয়। এ সময় থানচিতে কৃষি ব্যাংক ডাকাতির সময় ব্যবহৃত জিপগাড়িসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রুমার সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেএম আরাফাত আমিন জানান, রুমা সেনাবাহিনীর অভিযানে ব্যাথেল পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৭টি দেশি বন্দুক, ২০টি রাউন্ড গুলি, কেএনএফের পোশাক, বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে রুমা সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ার এবং কেএনএফের ৬ সদস্যসহ আটক করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, রুমা-থানচিতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা-থানচিতে ৮টি মামলা হয়েছে। তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে সেনাবাহিনী-র্যাব-পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, থানচি থেকে ১ জন এবং রুমা থেকে ৬ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এর আগে সদরের স্যারণ পাড়া থেকে কেএনএফের প্রধান সমন্বয়ককে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে সেনাবাহিনী-র্যাব-পুলিশের পৃথক অভিযান এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রবিবার রাতে বান্দরবান সদরের রেইছা চেকপোস্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার কেএনএফ সদস্যেদের একজন ভানুনুন নুয়াম বম। তিনি রোয়াংছড়ির ১ নম্বর রোয়াংছড়ি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড রৌনিন পাড়া এলাকার জিংচুন নুং বমের ছেলে।

কেএনএফের গ্রেপ্তার অপর দুই সদস্য আপন ভাই-বোন। তাদের নাম জেমিনিউ বম ও আমে লনচেও বম। তারা থানচির ৩ নম্বর সদর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সিমতাংপি পাড়া লাল মুন চম বমের সন্তান।

আটক গাড়ি চালকের নাম মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সাগর। তিনি এলাকার মো. ইউছুফের ছেলে। তাকে থানচির টিএনটি পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রুমার বেথেল পাড়া থেকে গ্রেফতার কেএনএফ সদস্যের পরিচয় পাওয়া যায়নি তবে সোনালী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম লালচিয়াম বম।

অভিযানে যুক্ত হয়েছে সাজোয়া যান:

তাছাড়াও চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪টি বিশেষ সাঁজোয়া যান এপিসি আনা হয়েছে এ দুই উপজেলায়। যা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাাকায় টহল দেবেন  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, উপজেলাগুলোতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে চারটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) আনা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়ানো হবে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসব সাঁজোয়া যানগুলো রুমা-থানচি উপজেলায় ব্যবহার করা হবে।

যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা কেএনএফের:

এদিকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সশস্ত্র সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কেএনএফ এর সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং সোমবার সকালে এই বার্তা প্রদান করেন।

বার্তায় বলা হয়, আজ সোমবার বিকাল ৫টা থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকা সমূহের সকল ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সকল গাড়ি সমিতি’র জন্য এই সতর্কবার্তা। জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী প্রত্যেক যানবাহনের সমিতি ও মালিকগণ তাদের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যের জন্যে দায়ী থাকবে।

এদিকে কেএনএফের এই সহিংহতার  ঘটনায় এখনও আতঙ্ক  ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তিন উপজেলার (রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি) ব্যাংকগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপজেলার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তিন উপজেলার ব্যাংক বন্ধ থাকায় বান্দরবান জেলা সদরে ব্যাংকগুলোতে  গ্রাহকের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ফলে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে গণপরিবহনসহ অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না। রুমা বাজার এখনও জনশূন্য।

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে। এর পরের দিন থানচিতে দিন দুপুরে কৃষি ও সোনালী ব্যাংক লুট  করে মোট দুই ব্যাংক থেকে ১৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং রাতে থানচি থানায়ও গুলি বর্ষণ করে হামলা চালায়। এরপর থেকে কেএনএফ দমনে পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী।

32Shares

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়