আমাদের গ্রামে কোন সরকার নাই। সরকার থাকলে বছরের পর বছর আমাদের রাস্তা নিয়ে এভাবে কষ্ট পেতে হতো না। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে আর কারো কোন খবর থাকে না। খবরই বা কেনো থাকবে। তারা তো আসে প্রতি নির্বাচনে একবার।
এভাবে ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললেন বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ত্রিশডেবা গ্রামের এক কৃষক। তার দুই একর জায়গাজুড়ে সবজি ক্ষেত আছে এই গ্রামে। দেশে যেখানে ৭০/৮০ টাকার নিচে কোন সবজি নাই সেখানে সবজিগুলো ১৫/২০ টাকা দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে জায়গাতেই। এরকম শত শত কৃষকের করুণ কাহিনী শুনে যেনো শেষ করা যাবে না। এখানে চাষ হয় বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী শাক-সবজি, বরই, আম, লেবু, কলা ও রাবারসহ আরো অনেক কিছু।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শুধু ১৫ কিলোমিটারে একটি সড়ক। এই সড়কের রাস্তার বিভিন্ন অংশ ও কালভার্টগুলো ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। গাড়ি তো দুরের কথা হেঁটে চলাচল করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই সড়কে। বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কর্দমাক্ত এই সড়কে আসা যাওয়া করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আছাড় খেয়ে আহত হচ্ছে।
বনফোঁড় এলাকার রমিজ উদ্দিন জানান, একটা মুমূর্ষ রোগী বা গর্ভবতী মহিলা নিতে চাইলে কাঁধে ভার করে পায়ে হেটে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এক দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই অন্যদিকে রাস্তার সমস্যা। সবকিছু যেনো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে গ্রামের সহজসরল মানুষগুলোর জন্য।
লামা উপজেলার ইয়াংছা বাজার থেকে ত্রিশডেবা পাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারের এই সড়কটি ব্রিক সলিং হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু সলিং হওয়ার পর থেকে আজব্দি কোন সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা সংস্কারের বরাদ্দ দেয়ার কথা শুনে আসছে এই এলাকার মানুষগুলো। কিন্তু কখনো কাজ করতে দেখেনি। প্রতি নির্বাচনে মানুষের একটায় চাওয়া ছিল শুধু সড়কটি সংস্কার করে পাকা করা হোক। জনপ্রতিনিধিরা এলাকাগুলোতে নির্বাচনের সময় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে সড়ক তো দুরের কথা খোঁজ খবরই রাখেনা।
ফাঁসিয়াখালীর এই সড়কের কোল ঘেষে ঠাণ্ডার ঝিরি পাড়া, ইয়াংছা ছোট পাড়া, ইয়াংছা বড় পাড়া, বনফোড় বাজার, ওয়াক্কাও পাড়া, রাজা পাড়াসহ গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি গ্রাম যেখানে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। আছে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবঙ ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচনের তিন মাসের মধ্যে রাস্তাটা সংস্কার করে দিবে। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে তার আর এই গ্রামগুলোতে আসা হয়নি।
ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরী বলেন, আমরা এলজিইডির সাথে যোগাযোগ রেখে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি রাস্তাটি যাতে সংস্কার করা হয়। আশা করছি খুব শীঘ্রই কোন একটা ব্যবস্থা হবে।
লামা এলজিইডি সুত্রে জানা যায়, ২০২১,২০২২ এবং ২০২৩ অর্থবছরগুলোতে মোট তিন বার হেডঅফিসে এই রাস্তার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ফান্ড স্বল্পতার কারনে কাজটা এপ্রোভ হচ্ছে না।
লামা এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলী আবু হানিফ বলেন, এই সড়কটিসহ ফাঁসিয়াখালীর মোট ৪ টি সড়কের প্রস্তাব আমরা এ বছরের মে মাসেও পাঠিয়েছি। এপ্রোভ হয়ে আসলে আমরা কাজটি করতে পারবো।