বৃহস্পতিবার- ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

dainiknilgiri.com
প্রচ্ছদ /

চকরিয়ায় এলজিইডি সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন কোনাখালী-ঢেমুশিয়া সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক দূর্নীতি ও লবন পানি যুক্ত বালি, নিম্নমানের পাথর ও কনক্রিট ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে।

উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে নির্ধারিত হারে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে খোদ চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। স্থানীয় লোকজন উন্নয়নমূলক কাজের নিম্নমান সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করলেও তিনি তাতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উলটো ঠিকাদারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দে কোনাখালী-ঢেমুশিয়া সড়কের ২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব পেয়েছে কক্সবাজারের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জহুরী এন্টারপ্রাইজ। চকরিয়ার টিকাদার পারভেজ এর মালিকানাধীন আসিফ এন্টারপ্রাইজ কাজটি কিনে নিয়ে গত জানুয়ারী মাসে কাজ শুরু করেন।

শুরুর দিকে সড়কের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণের সময় নিম্নমানের ইট ও মাতামুহুরি নদীর লবনাক্ত বালি ব্যবহারের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ চকরিয়ায় তৎকালীন কর্মরত ভারপ্রাপ্ত উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার শাফায়েত ফারুক চৌধুরীকে জানানো হলে, তিনি তড়িৎ গতিতে কাজ পরিদর্শন করে নিম্নমানের ইট ও বালি অপসারণ করে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।

পরবর্তীতে কার্পেটিং এর কাজ শুরু করার জন্য ছোট ছোট পাথরকুচি, কনক্রিট ও বালি মিক্সিং করে সড়কের বাইরের সাইট অর্থাৎ নদীগর্ভে স্তুপ করে রাখেন টিকাদার। এদিকে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে মিক্সিং করা পাথরকুচি, কনক্রিট ও বালি লবনাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয় এবং রোদের প্রখর তাপে মিক্সারিং করা মালামাল গুলোর উপরে লবনের প্রলেপ বসে যায়।

রবিবার বিকেলে (৯ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, জোয়ারের লবনাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হওয়া লবন যুক্ত পাথরকুচি, কনক্রিট ও বালি গুলো সড়কে কার্পেটিং কাজে ব্যবহার করছে টিকাদার পারভেজ। লবনাক্ত পানিতে নিমজ্জিত মালামাল ব্যবহারের বিষয়ে টিকাদার পারভেজের কাছে জানতে চাইলে, এ বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম সাহেব ভালো বলতে পারবেন বলে এডিয়ে যান।

স্থানীয় কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারের দুই কোটি টাকা বাজেটে সড়ক সংস্কার কাজে লবন যুক্ত পাথরকুচি, কনক্রিট ও বালু ব্যবহারের ফলে সড়কটি অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বিষয়টি এলজিইডি’র চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বারবার অবগত করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো টিকাদারের পক্ষ নেন। এদিকে দ্রুত কার্পেটিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে টিকাদার পারভেজ। এ নিয়ে এলাকায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলমকে ম্যানেজ করে টিকাদার এই সমস্ত পরিত্যক্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে।

এলজিইডির চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশল জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, মালামাল নদী গর্ভে রাখা ছাড়া আমাদের আর অন্যকোন উপায় নেই। জোয়ারের পানিতে ভিজে লবন যুক্ত হলেও এসব মালামাল সড়কের কার্পেটিং এ ব্যবহার করলে সড়কের কোন ক্ষতি হবে না। সাংবাদিকরা তাকে ফোন করায় তিনি যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তাকে আর ফোন না করতেও নিষেধ করেন তিনি।

এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন খান যুগান্তরকে বলেন, সড়কের কার্পেটিং এ বালি ও লবন যুক্ত পাথরকুচি ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। কাজের গুণগত মানের ক্ষেত্রে আমি কোনধরনের কম্প্রোমাইজ করবো না। এলজিইডির জেলা অফিস থেকে একটা টিম গিয়ে এটি পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। এই কাজে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

14Shares

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়