কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। “প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬২ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)” প্রকল্পের আওতায় নবগঠিত এ উপজেলায় এ মসজিদ স্থাপনে প্রশাসনিক তোড়জোড় চলছে।
ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা সংলগ্ন প্রস্তাবিত জমিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রণীত গাইডলাইন অনুযায়ী জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ সরেজমিন তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদনও প্রেরণ করেছেন। ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে , ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের অর্থায়নে তৎকালীন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারভূক্ত এ অগ্রাধিকার প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৯০৬২.৪১ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি ২০১৯ সাল মেয়াদের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অধিশাখার উপ-সচিব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন গত ২৯-৫- ২০১৭ সালে মডেল মসজিদের স্থান/ জমি নির্বাচন সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ও ‘৫৬০ টি মডেল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের উপ- প্রকল্প পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান সরকার ১১-৬-২০১৭ তারিখে অনুরূপ গাইডলাইন প্রেরণ করেন। পরদিন আরেকটি পত্রে তিনি এ মডেল মসজিদ স্থাপনের জন্য ০.৪০ একর জমি সংস্থান সংক্রান্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা কার্যালয় বরাবর পত্র ইস্যু করেন।
এদিকে ৩০৮ মহিলা আসন- ০৮ এর সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ঈদগাঁও উপজেলার মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা সংলগ্ন কে, এস মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেটের জমিকে স্থান নির্বাচন করার সুপারিশ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি ডিও লেটার দেন।
পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত জমি ঈদগাঁও উপজেলার জনবহুল ও বৃহত্তর ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। এতে ৪৩ শতক জমি রয়েছে। অত্র মসজিদটি এ স্থিত জমিতে নির্মাণ করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।
জনস্বার্থে প্রস্তাবটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে তিনি সরকার প্রধানের নিকট সুপারিশ করেন।
এর প্রেক্ষিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা- ২ শাখার ও উপ-সচিব (উন্নয়ন) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র ইস্যু করেন। পত্রটি ছিল কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা সংলগ্ন কে, এস মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেটের জমি নির্বাচন সংক্রান্ত। পত্রটিতে প্রস্তাবনা যাচাই করা প্রয়োজন মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এ পত্রের আলোকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) শুভাশীষ চাকমা ২৭/১১/২৩ তারিখে মসজিদের স্থান/জমি নির্বাচন সংক্রান্ত গাইড লাইনের আলোকে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক মতামত সহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য একটি পত্র ইস্যু করেন।
অন্যদিকে গত ২০/৪/২৪ ইংরেজি তারিখে ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভায় উপস্থিত সদস্যবৃন্দ এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, মাদ্রাসায় বর্তমানে যে মসজিদটি আছে তা আকারে ছোট। অতীতে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকাবস্থায় এ মসজিদ খানা নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেহেতু ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি এবং ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে উল্লেখিত জায়গায় মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিনামূল্যে এবং বিনা শর্তে জমি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওয়াকফ এস্টেটের মতোয়াল্লী (ইসি নম্বর- ৫৯৬) মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ভবিষ্যতে এ জমির মালিকানা দাবি করবে না এবং দাবী করলেও তা আইনত অগ্রাহ্য হবে মর্মে একটি অনাপত্তি জ্ঞাপনপত্রও প্রদান করেন।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে উল্লেখিত স্থানে জমি নির্বাচন সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সহকারী কমিশনার (ভূমি), কক্সবাজার সদর অফিসে প্রেরণ করা হয় ২/৫/২৪ ইংরেজি।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদ স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রস্তাবিত জমির দৈর্ঘ্য ১৬৫ ফুট এবং প্রস্থ ১১০ ফুট অর্থাৎ ৪১ শতক নাল জমি। প্রতিবেদিত জমি ওয়াকফ জমি। যা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স হতে ২ কিঃমিঃ এর মধ্যে প্রশস্ত রাস্তা সংলগ্ন। এতে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগের সুবিধা রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী ১৩/৬/২৪ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদনটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ঈদগাঁও) বরাবর দাখিল করেন।
সর্বশেষ ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবল চাকমা প্রস্তাবনার বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিস হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদন, ২৬ জুন উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সহ গত ২৭ জুন জেলা প্রশাসক (কক্সবাজার) বরাবর প্রেরণ করেন।