মা-দাদীরা একটা সময় পাটায় হলুদ,মরিচ, মসল্লা বেটে রান্না করতেন সুস্বাদু নানা ধরনের খাবার। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সে খাবার খেতো পরিবারের সদস্যরা। যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিল-পাটায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে।
শিল-পাটায় পিষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ ও কালজিরার ভর্তার স্বাদ আজও অতুলনীয়। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রান্নার সে স্বাদ আজ হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ও ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল-পাটা। এককালে ঘরে ঘরে শিল-পাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম পাথেয়। কিন্তু কালের আবর্তে শিল-পাটা বিলীন হওয়ার পথে।
বর্তমানে সময় ও কালের প্রবাহে বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটার ব্যবহার। এখন প্রত্যেক এলাকায় রাইস মিল রয়েছে। রাইস মিলে গুড়া করা হয় হলুদ, মরিচ, মসল্লা। গুড়া মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শিল-পাটায় মসল্লা পিষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে।
গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসল্লার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিল-পাটার বিকল্প হিসেবে এসেছে ব্লেন্ডার মেশিন। তুলনামূলক কম কষ্টসাধ্য হওয়ায় ব্লেন্ডারেই মসলা পেষার কাজ সারছেন গৃহিণীরা। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে এখনো তৈরি হচ্ছে শিল-পাটা। পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর এনে নিপুন কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নানা রকমের বাহারি নকশায় তৈরী করছেন শিল-পাটা।
উপজেলার ভাটিয়ারীর আবদুল বারেকের বাড়ির নুরুল আবসার (৪০) ছোট একটি টিনের ঘরে কয়েকজন কারিগর দিয়ে তিনি শিল-পাটা তৈরি করছেন। জানালেন, তার তৈরি শিল-পাটা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আমার বাপ- দাদারা এ ব্যবসা করতে। আমরা যুগ যুগ ধরে শিল-পাটার ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। একেকটি পাটা পাইকারি দামে বিক্রি হয় ৩শ -৪শ টাকায়। নিজেরাও পাথর কেটে বানায় আবার কয়েকজন লোকও রেখেছি।