সোমবার- ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

dainiknilgiri.com

বাঁশখালীতে আ’লীগ নেতা খোরশেদকে জেতাতে বর্তমান-সাবেক এমপি-মেয়র ও ১৪ চেয়ারম্যান একাট্টা

আগামী ৫ জুন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিন পদে ১৪ জন প্রার্থীর ব্যাপক প্রচার- প্রচারণায় নির্বাচনি মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

তবে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী হলেও মূলতঃ লড়াই হবে গত ২ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মো. খোরশেদ আলম ও বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ এমরানুল হকের সাথে। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে প্রার্থীদের গত কয়েকদিনের প্রচারণা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি ও কিছু ভিডিও ভাইরালের দৃশ্য।

এসব দৃশ্য দেখে আদৌ বাঁশখালীতে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাধারণ ভোটারদের অভয় দিতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে, সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরালের দৃশ্য এবং স্থির চিত্র দেখে জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ থেকে বিগত সময়ে ২ বার নির্বাচন করে হেরে যাওয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. খোরশেদ আলমের দোয়াত কলমের পক্ষে মাঠে নেমেছেন, বাঁশখালীর বর্তমান এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি, সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী,

তাঁদের সমর্থিত বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র এস এম তোফায়েল বিন হোসাইন ও বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিভিন্নস্তরের আওয়ামী লীগ-যুব লীগ নেতৃবৃন্দ। গত শুক্রবার ৩১ মে পুকুরিয়া ইউনিয়নের বরুমছড়া গ্রামে জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র ও ১৪ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কয়েকজন আওয়ামী লীগ- যুব লীগ নেতা একাট্টা হয়ে খোরশেদ আলমের পক্ষে বৈঠকও করেন এবং সকলে মিলে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

তবে বর্তমান এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি বিধিবিধানের বাধ্যবাধকতায় প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচারণা না করলেও এলাকায় এলাকায় ঘুরে ভিন্ন কৌশলে দোয়াত কলমের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে গ্রামবাসী ও তাঁর সমর্থিত নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন। এমন কী দোয়াত কলম প্রতীক প্রাথী খোরশেদ আলমের সাথে ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। এসব দৃশ্য দেখে সাধারণ ভোটাররা অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

অপরদিকে ব্যাপক জনপ্রিয় ও বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত এবারের আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ এমরানুল হককে এখনো সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনি মাঠের রাজা ভাবছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে দৃঢ় আস্থা নিয়ে মাঠ দাবিয়ে বেড়াচ্ছে এক ঝাঁক ছাত্রলীগ নেতা কর্মী। নিরবে পাশে রয়েছেন অসংখ্য আওয়ামী লীগ ও যুব লীগ নেতা কর্মীও ।

এক প্রার্থীর পক্ষে অসংখ্য ক্ষমতাধররা মাঠে নামলেও নির্বাচনি মাঠে এতিমের মতো প্রচারণায় সর গরম করে রেখেছেন এমরানুল হক আনারস প্রতীক প্রার্থী নির্বাচনি মাঠ। বাঁশখালী জুড়ে এখন ব্যাপক আলোচনা ও একে-অপরকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে, কেন এই ব্যাপক জনপ্রিয় ছাত্র লীগ নেতা এমরানুল হককে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ?

দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. খোরশেদ আলম বলেন, এবার নির্বাচনি মাঠে সবাই আমার পক্ষে কাজ করছেন, বৃদ্ধ বয়সে সবার সহযোগিতা পেয়ে আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে আমি নির্বাচিত হবই। সবার দোয়া চাই।

আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ এমরানুল হক বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ আমার সাথে আছেন। কোন প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ভোট কেন্দ্র দখল না করলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হব। প্রশাসনের কাছে আমি সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটারদের সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তাদের সাথে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আরও দুইজন মাঠে আছেন তারা হচ্ছেন, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ ফখরুদ্দীন চৌধুরী (ঘোড়া প্রতীক ) এবং জাহিদুল হক চৌধুরী (মোটর সাইকেল প্রতীক) । এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। এরা হলেন আকতার হোসেন ( তালা প্রতীক), মো. আরিফুজ্জামান আরিফ ( চশমা প্রতীক), মো. হোছাইন ( বই প্রতীক), ইমরুল হক চৌধুরী ফাহিম ( টিউবওয়েল), এম.এ মালেক মানিক ( উড়োজাহাজ), মো. আরিফুর রহমান সুজন ( টিয়া পাখি প্রতীক), মো. ওসমান গণী ( মাইক প্রতীক)।

অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) রেহেনা আকতার কাজমী ( কলসী প্রতীক), ইয়ামুন নাহার ( প্রজাপতি), নুরী মন আক্তার নুরী ( ফুটবল)।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে আমরা শতভাগ ভালো নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনরুপ কারচুপি কিংবা অপরাধ করলে কেউ রেহায় পাবেন না।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনী সর্বদা সব কিছু নজরে রেখেছেন। কেউ সংঘাত-সংঘর্ষ করলে তাৎক্ষণিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ৫ জুন সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাঁশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ১১৫টি ভোট কেন্দ্রের ৮৫৬টি ভোট কক্ষে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাঁশখালীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লক্ষ ৭৬হাজার ৯শত ৪জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২লক্ষ ২হাজার ৩শত ২১জন, মহিলা ভোটার ১লক্ষ ৭৪হাজার ৫শত ৮১জন

1Shares

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়